সুইডিশ একাডেমির সমালোচনা করে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার নির্ধারণী কমিটির দুই সদস্য পদত্যাগ করেছেন। ২০১৯ সালের সাহিত্য শাখা নোবেলজয়ী পিটার হান্ডকে ও এর আগে একটি যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ দুজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সুইডিশ একাডেমি।
পদত্যাগীরা হলেন গুন-ব্রিত সুন্দস্ত্রম ও ক্রিস্তোফের লিয়ান্দোর। তারা দুজনই একাডেমির বাইরের সদস্য (এক্সটারনাল মেম্বার)। এ দুজনের দায়িত্ব ছিল প্রার্থী বাছাই ও চূড়ান্ত প্রার্থীর ভোটাভুটিতে নোবেল কমিটিকে সহায়তা করা। পদত্যাগের আগ পর্যন্ত তারাসহ সাহিত্যে নোবেল কমিটির সদস্য ছিল নয়জন। এদের চারজন সুইডিশ একাডেমির অভ্যন্তরীণ সদস্য ও বাকি পাঁচজন একাডেমির বাইরের সদস্য।
২০১৯ সালের পুরস্কারের জন্য পিটার হান্ডকে নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেন নি গুন-ব্রিত সুন্দস্ত্রম। জার্মানভাষী এ অস্ট্রীয় সাহিত্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ১৯৯০-এর দশকে যুগোস্লাভিয়া যুদ্ধের সময় সার্বদের সমর্থন দিয়েছেন। নিজের সাহিত্যকর্মে ও মতামতধর্মী লেখায় সার্বিয়াকে আক্রমণের শিকার ও ভুক্তভোগী হিসেবে তুলে ধরেছেন হান্ডকে। ২০০৬ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারাধীন সাবেক যুগোস্লাভের প্রেসিডেন্ট স্লোবদান মিলোসেভিচের শেষক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
যুদ্ধবাজ ও মানবতাবিরোধী শাসককে সমর্থন জানানোয় ব্যাপক সমালোচনার মুখে থাকা হান্ডকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করার পর কমিটি জানায়, হান্ডের কাজকে রাজনীতির বাইরে রেখে বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু রাজনীতি থেকে সাহিত্যকে আলাদা করে দেখার ব্যাখ্যায় সুইডিশ একাডেমির সঙ্গে একমত হতে পারেন নি গুনত-বিত্র সুন্দস্ত্রম।
তার সঙ্গে পদত্যাগ করেছেন কমিটির অন্যতম সদস্য ক্রিস্তোফার লিয়ান্দোর। তবে, ক্রিস্তোফার লিয়ান্দোর পদত্যাগের বিষয়টি ২০১৯ সালের নির্বাচিত ব্যক্তিকে নিয়ে নয়, তা পরিষ্কার করে জানিয়েছেন। কমিটির এক সদস্যের স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠার পর প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন এ সুইডিশ সাহিত্যিক। ২০১৮ সালে ওই অভিযোগ উঠেছিল। ওই বছর সাহিত্যে পুরস্কার ঘোষণা স্থগিত রাখে সুইডিশ একাডেমি। এরপর একাডেমির বিধানে পরিবর্তন এনে মূল কমিটিকে সহায়তার জন্য বাহির থেকে সদস্য রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
এরপরও প্রয়োজনীয় সংস্কারের গতি নিয়ে অসন্তুষ্ট লিয়ান্দোর। সুইডেনের এক স্থানীয় পত্রিকায় লিয়ান্দোর লিখেছেন, ‘সময়ের ব্যাপারে একাডেমি ও আমার ভিন্নমত রয়েছে। এক বছর আমার জীবনের জন্য অনেক বড় একটা সময় কিন্তু একাডেমির জন্য তা খুবই সামান্যব্যাপ্তির।’
২৩৩ বছরের পুরো সুইডিশ একাডেমি এ দুই লেখকের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি সাবেক দুই সদস্যের অবদানের কথা উল্লেখ করেছে। একাডেমির স্থায়ী সচিব বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বছরজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেয়ার জন্য আমরা নোবেল কমিটির কাজ পুনর্বিবেচনা করছি।’